এমনও শুনতে হয় !

"দেশে কোন স্বাধীনতাবিরোধী কখনও ছিলো না, এখনও নেই" -- বলেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ।

আফসোস।
এই আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ। যেখানে "জামায়াতে ইসলামী"ও একটি বিশিষ্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে এখন পরিচিতি পায়। অথচ এই দলটিই একাত্তরে "বাংলাদেশ" নামটিতেই বিশ্বাস করতো না। বাংলাদেশের জন্মলগ্নেই এই দেশের ভ্রূণ নষ্ট করে ফেলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলো যারা, এমনকি জন্মের পর যেন সেই শিশু দেশটি পূর্ণ বিকশিত হয়ে গড়ে উঠতে না পারে সেজন্য বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলেছিলো যারা -- তাদের সম্মিলিত দল জামায়াতে ইসলামী এখন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে নির্লজ্জ ধৃষ্টতায় নিজেদের দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচয় দেয়।

ধর্মভিত্তিক এই দলটি বোধহয় দেশটিকেও ইদানিং একটা ধর্মগোত্র ভেবে বসেছে। তাই নিজেদের খেয়াল-খুশিমত "ফতোয়া" দেয় দেশের ইতিহাস নিয়ে। সর্বশেষ সংযোজন উপরের বক্তব্যটি। আমার অবাক লাগে, এই মুজাহিদ, যে নিজের ১৯৭১ সালে আলবদর বাহিনীর ঢাকা শাখার প্রধান ছিলো, সে কি করে বলে সে নিজেই যুদ্ধাপরাধী নয়?!

ধিক্কার দেই এইসব নির্লজ্জ, সুবিধাবাদী, রাজাকার, আলবদরদের। তাদের এইসব নির্লজ্জ মিথ্যা ফতোয়ায় বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতার ইতিহাসের কিছু যাবে আসবে না। এদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের কথা থেকে জানতে পারলাম, ১৯৭১ সালের জামায়াত সমর্থিত পত্রিকা "দৈনিক সংগ্রাম"-এর নয় মাসের সংখ্যা পড়লেই খুব স্পষ্টভাবে তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধী ভূমিকা জানা যায়, জানা যায় কেমন করে তারা গণহত্যা এবং নারী নির্যাতনে পাকিস্তানী বাহিনীকে সাহায্য করেছে নিজেরা শান্তিকমিটি গঠন করে, কিভাবে তারা তালিকা প্রস্তুত করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসংগে শাহরিয়ার কবির আরো বলেছেন, "১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবার জন্যে যে দালাল আইন প্রণয়ন করা হয়েছিলো, সেখানে পরিষ্কার সংগা দেয়া হয়েছিলো কাদের বিচার করা হবে। এবং সেই আইন অনুযায়ী কিন্তু জামায়াতের প্রধান গোলাম আজমের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিলো যুদ্ধাপরাধের দায়ে। এবং জামায়াতের অনেক নেতাকে তখন গ্রেফতার করা হয়েছিলো, অনেকে পাকিস্তান পালিয়ে গিয়েছিলো।" এতসব পরিষ্কার প্রমান থাকা সত্ত্বেও যারা বলে, বাংলাদেশের কখনও যুদ্ধাপরাধী ছিলো না, তাদের কথা শুনে বোধহয় দুঃখ না পেয়ে আমাদের হা-হা করে অট্টহাসি হাসা উচিৎ।

যুদ্ধাপরাধীর আন্তর্জাতিক সংগা অনুযায়ী যেসব সৈনিক যুদ্ধে অপরাধ করেছে শুধু তারাই নয় বরং যেসব সিভিলিয়ান তাদের সাহায্য করেছে তারাও যুদ্ধাপরাধী। এবং যেকোন সংগাতেই জামাতের শীর্ষনেতারা সেই সময়ের যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধী বিচারের আইন সম্পর্কে তাঁর কথা থেকে জানতে পারি, ১৯৭৩ সালে আমাদের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ এবং বিচারের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে যে সংবিধান এখনও বাংলাদেশে বলবৎ। কাজেই এখনও সরকার চাইলে সাংবিধানিকভাবে বিচার করতে পারে। এমনকি সামরিক ট্রাইব্যুনালেও বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব, যেমনটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের করা হয়েছিলো।

যুদ্ধাপরধীদের বিচারের সব পথ খোলা আছে, শুধু প্রয়োজন সরকার অথবা সেনাবাহিনীর সদিচ্ছার। যেকোন উপায়ে হোক, আমরা চাই - যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক।

Comments

Unknown said…
যুদ্ধাপরধীদের বিচারের সব পথ খোলা আছে তাই আমরা চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক।আপনাকে ধন্যবাদ।
দাশু said…
এই লেখাটার খুব দরকার ছিলো। সবার একটা করে লেখা দরকার এই বিষয়ে। সারা পৃথিবীর জানবার দরকার এরা নির্লজ্জ্ব এবং দুমুখো।
আসলেই সবার এই বিষয়ে লেখা দরকার, জনমতের জোর গড়ে উঠুক সব জায়গায়।

ধন্যবাদ V। আমি কি আপনাকে চিনি?

হযু ভাই, আমার ব্লগে আসেন মাঝে মাঝে, বড় ভালো লাগে।
তিথি আপা,

আপনি কি কোথাও চাকরি করছেন? আমি বাংলাদেশি একজন ব্লগারকে খুজছি Search Engine Marketing (SEM) এর জন্য। Can you help me?

Asif Anwar
Search & Internet Marketing Professional in Bangladesh
www.asifanwar.7p.com
Marketing Manager
www.colorexpertsbd.com
আমি এইসব বুঝি না ভাই। ব্লগ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Popular posts from this blog

হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো | শাহ আবদুল করিম

নজমুল আলবাবের " পাতা ঝরার আগের গল্প" - আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া বা স্মৃতির চর্বণ

ক্যাফের শহর মেলবোর্ন