Posts

Showing posts from December, 2007

সুইট ডিসেম্বর

বিবাহের মত একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যে এরকম প্রায় পরিকল্পনাহীনতায়, আকস্মিক ঘটনার মত দুম করে ঘটে যেতে পারে এবং সেটা নাটক-সিনেমায় নয়, বাস্তবে-- সেটা নিজের জীবনে না ঘটলে সেরকম করে বুঝতাম কি করে?! সময়ের নিম্নাঙ্গে পায়ের বদলে অতি দ্রুত গতিসম্পন্ন চাকা অথবা উর্দ্ধাঙ্গে পাখির নরম ডানা নয় হয়ত, হয়ত জেট প্লেনের ডানা লাগানো আছে। নইলে সেই আকস্মিক ২২শে ডিসেম্বর একবার এলো আমাদের জীবনে বুঝলাম, তাই বলে বছর ঘুরে আবার সেই দিনটাই উপস্থিত? আরিব্বাবা, একটা নয় দুইটা নয়, একেবারে ৩৬৫ বার পৃথিবী ঘুরান দিয়ে দিলো এর মাঝে ? বেশ একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে নতুন করে। বিয়েবার্ষিকী উপলক্ষ্যে লজ্জাবার্ষিকী। :-) পৃথিবীর ব্যাপার স্যাপার ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না এখনও। মাঝে মাঝে এত তীব্র হতাশা জেঁকে বসে...আবার সেই আমাতেই জ্বলজ্বল করে কোন এক আশ্চর্য আলো! ভালোবাসা...বন্ধুতা...কি মমতামাখা সব শব্দ। কি মায়াময় অনুভূতি! এইজন্যেই বুঝি মানুষ বেঁচে থাকে। আরো বেঁচে থাকতে চায়। হ্যাপি এনিভার্সারি তারু। রবিবুড়ার কাছ থেকে ধার করে একটু বলি-- "তোমায় নতুন করে পা'ব বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণ। ও মোর ভালোবাসার ধন"।

আবার খেরোখাতা

ছোটবেলায় ডায়েরী লিখার অভ্যাস ছিলো খুব। ক্লাস সিক্সে এটা প্রবল হলো। তুমুল মাত্রায় বেড়ে গেলো কলেজ জীবনে। ভার্সিটির কয়েকটা বছর...তারপরে একটা বিশাল গ্যাপ। থার্ড ইয়ার থেকে শুধু ডায়েরী লিখাই নয়, প্রায় সবই কেমন স্থবির হয়ে গিয়েছিলো আমার। আবেগ মানুষের উন্নতির পথে অনেক বড় এক অন্তরায়, বিশ্বাস করি তখন থেকেই। তাই জন্য দুঃখিত নই অবশ্য আমি মোটেও। ছোট্ট যে জীবন আমরা বাঁচি সেখানে মানুষ হিসেবে সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট, "আবেগ"ই যদি না থাকে, তো রোবটের মত সফল হবার কোন মানে নেই আমার কাছে। অবশ্য "সাফল্য" কথাটাও তথাকথিত অর্থেই লিখেছি এখানে। তো সেই প্রায় স্থবিরতা একেবারে পূর্ণতা পেলো মামণি চলে যাবার পর। এর পরের একটা বছর আক্ষরিক অর্থেই ঠিক কিছুই করি নি আমি। ক্লাসের পড়াশোনা বা অন্য বই পড়া, গান গাওয়া, ছবি আঁকা--আমার জন্য সবচেয়ে স্বাভাবিক এই কাজগুলো পুরো বন্ধ হয়ে গেলো। অনার্সটা কিভাবে পাশ করলাম সে এক বিস্ময়! আসলে মা চলে গিয়ে মানুষের জীবনের ব্যাপ্তির ক্ষুদ্রতা বড় কড়াভাবে আমার মস্তিষ্কে গেঁথে দিয়ে গেলো। এটা এক রকম ভালোই হলো। একটা সময় ছিলো, অনেক কিছু পাবার আকাঙ্ক্ষা ছিলো। ক্লাসে ফার্স্ট না হয়ে সেকেন্ড বা

হয় না এমন হয় না...

চার মাস ধরে দেশছাড়া আছি। এমনি এমনি ঘরে বসে থাকি। ঠিক এমনি এমনি না অবশ্য, জীবনে যা কোনদিন করি নি তাই করি - ঘরগেরস্থালী। বেশ লাগে। এই পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত আমাকে কখনও কোন ক্ষেত্রে কোন গুরুদায়িত্ব নিতে হয় নি। পরিবারের সবার ছোট আল্লাদী মেয়ে, তাই সমস্ত ঝামেলা থেকে দূরেই থেকেছি সব সময়। বড় আপু, ছোট আপুকে দেখেছি মা'র কাজে সাহায্য করতে, আমাকে কখনও সেসব ছুঁতে দেয়া হয় নি ছোট বলে। অথবা ঘরের বাইরে যাসব কাজ, কত কিছুই থাকে না? আমাকে সেসবও করতে দেয়া হয় নি। নিজের দায়িত্বটুকুও কেমন করে যেন নিতে হয় নি কখনও। বাবা-মা, দুই বোন, এমনকি বন্ধুরাও কেমন আদর করে আগলে রেখেছে আমাকে সব সময়। ইউনিভার্সিটির প্রথম তিনটা বছর যখন তারেক ছিলো, মোটামুটি চোখ বন্ধ করে হেঁটেছি আমি সবখানে, নিশ্চিত নির্ভরতায়। এইবার, বিয়ের ছয় মাস পরে সংসার শুরু করে জীবনে প্রথম দায়িত্ব নিতে শিখলাম আমি। আশ্চর্য একটা দায়িত্ববোধ আপনা থেকেই ভর করলো আমার ওপর। মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদা- অন্ন। অতএব রান্নাবান্না দিয়ে শুরু হলো। কুটুর কুটুর করে কত কি রাঁধি। ট্রাডিশনাল রান্নার বাইরে এখান থেকে সেখান থেকে খুঁজে খুঁজে ডিফরেন্ট কিছু করার ট্রাই করি, কখনও নিজ

সেই...

একটু একটু করে একটা সময়ে ভেঙ্গেই পড়ে সব কিছু আসলে। প্রথম যখন হুমায়ূন আযাদের " সব কিছু ভেঙে পড়ে" পড়েছিলাম, স্বপ্নবাজ আমার হজম হয় নি...মাথা গুলাতে গুলাতে কেমন যেন গা গুলিয়ে বমি পেলো। সারা রাত আমি ঘুমুতে পারি নি...চেপে রাখা রোষময় বিস্ময়ের সবটুকু পরের দিন ঢেলে দেই প্রিয় বন্ধুর কাছে। "এমন হয়? এমন হয় বল?" রু আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। বোধহয় উদভ্রান্ত অবুঝ বন্ধুকে সত্যি বলে আরো উন্মাদ করে দিতে চায় না। আমি অস্থির হয়ে রু'কে তাগাদা দি, " বলিস না কেন কিছু?" রু ওর দু'হাতের তালুতে আমার হাত চেপে ধরে, বলে, "না রে, সব কিছু কি আর এমন হয়? আমাদের চারপাশটা আমরা দেখছি না? ঠিকই তো চলছে সব, কখনও কোথাও হয়ত এমন হয়। তাই বলে সব এভাবে ভেঙ্গে পড়ে না..." ক'টা দিন তবু আমার অস্বস্তিতে কাটে, কেমন অবিশ্বস্ত মনে হয় সব কিছু। রু আমাকে আগলে রাখে- মমতায়, বন্ধুতায়, ভালোবাসায়...। সেদিন রু'র কথা মেনেছিলাম আমি। তারপর... এখন আমি চোখ বুজে, মন বুজে সব কিছুর ভাঙ্গন দেখি। একেকটা রাত যায় নির্ঘুম...দিনগুলো হাসিমুখে বিষন্ন মনে...মাথা ভারী হয়ে আসে...ফেলে আসা দেশের একটা একটা খবর