আবার খেরোখাতা

ছোটবেলায় ডায়েরী লিখার অভ্যাস ছিলো খুব। ক্লাস সিক্সে এটা প্রবল হলো। তুমুল মাত্রায় বেড়ে গেলো কলেজ জীবনে। ভার্সিটির কয়েকটা বছর...তারপরে একটা বিশাল গ্যাপ। থার্ড ইয়ার থেকে শুধু ডায়েরী লিখাই নয়, প্রায় সবই কেমন স্থবির হয়ে গিয়েছিলো আমার। আবেগ মানুষের উন্নতির পথে অনেক বড় এক অন্তরায়, বিশ্বাস করি তখন থেকেই। তাই জন্য দুঃখিত নই অবশ্য আমি মোটেও। ছোট্ট যে জীবন আমরা বাঁচি সেখানে মানুষ হিসেবে সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট, "আবেগ"ই যদি না থাকে, তো রোবটের মত সফল হবার কোন মানে নেই আমার কাছে। অবশ্য "সাফল্য" কথাটাও তথাকথিত অর্থেই লিখেছি এখানে। তো সেই প্রায় স্থবিরতা একেবারে পূর্ণতা পেলো মামণি চলে যাবার পর। এর পরের একটা বছর আক্ষরিক অর্থেই ঠিক কিছুই করি নি আমি। ক্লাসের পড়াশোনা বা অন্য বই পড়া, গান গাওয়া, ছবি আঁকা--আমার জন্য সবচেয়ে স্বাভাবিক এই কাজগুলো পুরো বন্ধ হয়ে গেলো। অনার্সটা কিভাবে পাশ করলাম সে এক বিস্ময়! আসলে মা চলে গিয়ে মানুষের জীবনের ব্যাপ্তির ক্ষুদ্রতা বড় কড়াভাবে আমার মস্তিষ্কে গেঁথে দিয়ে গেলো।

এটা এক রকম ভালোই হলো। একটা সময় ছিলো, অনেক কিছু পাবার আকাঙ্ক্ষা ছিলো। ক্লাসে ফার্স্ট না হয়ে সেকেন্ড বা থার্ড হলে মন খারাপ হত (একবার ছাড়া ফার্স্ট আমি কখনই হই নি)। এখন আর সেসব হয় না। আমি যেমন আছি তেমন করেই এই ছোট্ট জীবনটা পার করে দিতে পারলেই আমি খুশি। সাফল্য বলতে আমি এখন বুঝি একান্ত আপন সম্পর্কগুলো। শেঁকড়, সেখানে সম্পর্ক স্থাপনের কিছু নেই, তবু যা আছে সেইটুকুতে বিশ্বাস রাখা, বাবা, বড় আপু, ছোট আপুকে কখনও ভুল না বুঝা, ওদের কষ্ট না দেয়া। আর যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে গেছে অজান্তে, স্বার্থহীনতায়- আমার বন্ধুরা। কোন মূল্যে আমি ওদের হারাতে চাই না। কখনও নিজে কষ্ট পেলেও ওদের কষ্ট দিতে চাই না। জীবনের একটা একটা ধাপে এই মানুষগুলো কতবার কতভাবে যে আশ্রয় আর প্রশ্রয় দিয়েছে নিঃশর্তে! আর আছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া- আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে জীবনসংগী হিসেবে পাওয়া। এই সবই আমার জীবনের সাফল্য, পাওনা। আর বাকি যা কিছু, সব পথ চলতে পাওয়া। পেলেও হয়, বেশ, ভালোই... না পেলে ক্ষতি কিছু নেই।

কত কি সব বলছি। ব্যক্তিগত কথা লিখে ব্লগের পাতা ভরিয়ে ফেলছি। আসলে... ইদানিং আবার আগের মত ডায়েরী লিখতে ইচ্ছা করে। মামণি, বাবা, আপুরা আর বন্ধুরা ছাড়া আর কখনই তেমন কথা বলি না আমি... এখানে, এই ভিনদেশে কোথায় পাই ওদের? তারুর সাথে বকবক করি অনর্গল। আর কারো সাথে না, আর কেউ নেই যে এখানে আমার। তাই একলা সময়ে নিজের সাথেই কথা বলি। বলতে ইচ্ছা করে। খাতা-কলমে ডায়েরী লিখা আর হবে কি না জানি না, তাই ব্লগেই আবার শুরু করলাম। একান্ত ব্যক্তিগত কথন - আমার খেরোখাতা।

Comments

Popular posts from this blog

হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো | শাহ আবদুল করিম

দ্বিধা

নজমুল আলবাবের " পাতা ঝরার আগের গল্প" - আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া বা স্মৃতির চর্বণ