"তারা আমাদের ভাই, মানব ভাই..."


দুর্গত মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ-সামগ্রী যে তাদের কাছে না গিয়ে অনেক সময়ই কোথায় যায় তা বোধহয় আমরা এখন ভালোই জানি। দুদকের অভিযানে দরিদ্র মানুষের অধিকারের ত্রাণের টিন, কাপড়, এমনকি বিস্কুট (!) পরিহাস করতে করতে মুক্তি পেয়েছে পেটমোটা বোয়ালগুলোর বাড়ি থেকে। কাজেই, যতই মরুক মানুষ ঘূর্ণিঝড়ে, যতই তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাক, যতই তাদের সদ্য পাকা ফসল মিশে যাক মাটির সাথে ইউপি চেয়ারম্যানের তাতে কি? ত্রাণের জন্য ৩৮৫ কেজি চাল পাওয়া গেছে, এতে আর ক'দিন, ক'জনের চলবে? তার'চে যার আছে তার আরেকটু বাড়ুক...এই যুক্তিতেই বুঝি আটকে দিয়েছিলো ত্রানের চাল। অতিকায় পিরানহা দেখে উদ্বুদ্ধ হওয়া এই বোয়াল অবশ্য পার পেলো না, কেমনে কেমনে জানি ধরা পড়ে গেলো। তার সাধের হঠাৎ পাওয়া চালগুলো চলে গেলো আধমরা মূল্যহীন মানুষগুলোর কাছে।

এসব খবর এখন আমাদের পুরোপুরি চোখ সওয়া, মন সওয়া। বিকার হয় না তেমন কোন পড়ে। অন্য খবরে চলে যাই তাই, আগে পাতা উল্টাতাম, এখন মাউজ ক্লিক করি, এই কেবল পার্থক্য। চোখের সামনে একের পর এক দুঃসংবাদ...তারপর হঠাৎ কোন খবরে আমাদের সব সয়ে যাওয়া চোখ হঠাৎ ভিজে উঠে। হায়, ইউপি চেয়ারম্যান নিজের থাকতে কেড়ে নিয়েছিলো, আর এই নিঃসহায় মানুষগুলো...!

না তেমন কিছু নয় ওরা, ওরাও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এক জনপদ- বাগেরহাটের জয়মনির ঘোল গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙেছে অনেকের, গাছ ভেঙ্গেছে, ফসল নষ্ট হয়েছে। তবু ঠিক পাশেই শরণখোলার ভয়াবহ রূপের কাছে ওদের ক্ষতি কিছু নয় জেনে নিজেদের সামাণ্যতম সম্বলগুলো ভালোবেসে তারা দিয়ে এসেছে প্রতিবেশী গ্রামকে। জয়মনি অঞ্চলে খাবার পানির বড় অভাব, বৃষ্টির পানি সঞ্চয় করে তাই সারাবছর ধরে ব্যবহার করতে হয় তাদের। সেই মহামূল্য সম্পদ থেকে তিন হাজার বোতল এবং পঞ্চাশটি বড় ড্রাম ভরে প্রায় ৫০০০ লিটার পানি দিয়েছে তারা শরণখোলার সাউথখালী গ্রামের মানুষকে। নিজেরা অতিসামান্য সম্বল থেকে কাপড়, শীতের কাপড়, খাবার, ওষুধ, স্যালাইন যা পেরেছে তাই দিয়ে দাঁড়িয়েছে তারা অপেক্ষাকৃত বেশি অসহায় মানুষগুলোর পাশে। এখানেও ইউপি চেয়ারম্যান আছে, তার ডাকেই সব মানুষ এক হয়েছে মানবতার খাতিরে। কত অবলীলায় সুন্দর আলী খাঁ বলতে পারে, "তারা আমাদির ভাই, মানব ভাই। আমার এক ভাই কষ্ট করতিছে, তাই দিছি"।

কিছুই নেই তাদের, আছে কেবল মানবতাবাদী মন। আছে যে সে খবর হয়তো জানেও না তারা। কখনও চর্চা করে নি, কখনও এক লাইন দাম্ভিক কথা লিখেনি, কখনও বক্তৃতা দেয় নি নিজের মহানুভবতা অবগত হয়ে। অথচ ঠিক সময়ে ভেতর থেকে উপচে উঠেছে তাদের অমূল্য সম্পদ, 'মন'। মানুষ হবার এই মৌলিক অথচ বর্তমানে মহামূল্য সম্পদটি যদি এমনি করেই সমস্ত মানবজাতির থাকতো!


------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্রঃ "প্রথম আলো"তে করা কুররাতুল-আইন-তাহমিনা'র রিপোর্ট।

Comments

Anonymous said…
This comment has been removed by a blog administrator.

Popular posts from this blog

হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো | শাহ আবদুল করিম

দ্বিধা

নজমুল আলবাবের " পাতা ঝরার আগের গল্প" - আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া বা স্মৃতির চর্বণ