মধুবন্তী

প্লেনে ওঠার আগ মুহুর্তে ওয়েটিং রুমে বসে আছি। এরকম কখনও হয় নি, আমার সত্যিই মনে হচ্ছিলো, গতকাল আমি দেশে এসে পৌঁছালাম, আর পরের দিনই ফিরে যাচ্ছি মেলবোর্ণের উদ্দেশ্যে। তিন বোন মিলে কত বেদনাময় তবুও আনন্দের সময় একে অপরকে জড়িয়ে রইলাম। কোন ফাঁকে কেটে গেলো একটা মাস?! দেশ থেকে ফেরার পথে আমি সাধারণত খুব রিচার্জড থাকি, বাকি কয়েকটা মাস দেশের আনন্দময় সময়ের স্মৃতি মাথায় নিয়ে পার করে দিবো, তারপরে এক বছরের মধ্যে আবার দেশে, এমন মনে হয়। এবার তেমন হলো না। এবারের দেশে আসাটা যে অন্য রকম ছিলো...।

একলা বসে থাকতে থাকতে চোখ ভিজে ওঠে বারবার। ঠিক তখন পাশে বসে থাকা মহিলা তার মেয়েকে ডাকেন, “ মধুবন্তী”। আমি আনমনেই বলি তাকে, “এত সুন্দর নাম রেখেছেন মেয়ের?” খুব মিষ্টি, মায়া মায়া গর্বের হাসি হাসেন সেই মা। বলেন, “ সবাই বলে। আমি না, আমার মায়ের রাখা নাম।” বলেই একটু থামেন, খুব নরম গলায় বলেন, “খুব সুন্দর মন ছিলো আমার মায়ের”। বুঝতে পারি তার মা বেঁচে নেই। সাথে সাথে তার চেহারা আর কন্ঠের কোমল কষ্ট বড্ড বেশি পরিচিত লাগে আমার। ঝট করে মুখ ঘুরিয়ে নিই আমি, তিনিও। বোধ হয় কেউ কারো চোখের জল কাউকে দেখাতে চাই না।

এর মাঝে ডাক পরে প্লেনে ওঠার। হাঁটতে হাঁটতেই মনের মধ্যে নামটা গুনগুন গুনগুন করতে থাকি, “মধুবন্তী, মধুবন্তী”। আহ কি মিষ্টি, মধুময় নাম! আমার বাচ্চাকাচ্চার খবর নেই, এর মাঝে এক গাদা নাম ঠিক করে রেখেছি, সেই লিস্টে আরেকটা যোগ হলো, মধুবন্তী! তক্ষুনি মনে পড়ে আমার জানের বান্ধবীর মেয়ের নাম “ মন্ময়ী মধুরিমা”, এর মাঝে মন্ময়ী নাম রেখেছে তার ফুপু আর মধুরিমা রেখেছি আমিই। নিজের অজান্তেই হেসে ফেলি, বাহ দুই বান্ধবীর মেয়ের নামই মধুমাখা! এসব ভাবতে ভাবতেই নিজের সিটে বসে গেছি। একটু পরে প্লেন ছেড়ে দিবে তখন হঠাৎ কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে মধুবন্তীর মা এসে দাঁড়ালেন আমার সামনে, “আচ্ছা আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে আমার। আপনি কি তন্বীকে চেনেন?” তন্বী আমার সেই বান্ধবীর নাম যার মেয়ের নাম মধুরিমা! আমি তক্ষুনি মুহুর্তের মধ্যে আগের জানা কিছু তথ্য আর সাত-পাঁচ মিলিয়ে চিনে ফেলি এই আপুকে, ইনি মধুরিমার ফুপু! পৃথিবীর দুই প্রান্ত থেকে “মন্ময়ী” এবং “মধুরিমা” এমনি করে “মন্ময়ী মধুরিমা” হয়ে গেলো। কি ছোট্ট আর চমক লাগানো একটা পৃথিবী আমাদের, না?

Comments

Unknown said…
ভালই লিখেছেন। :)
Anonymous said…
:(
অনেক খারাপ লাগলো লেখাটা পড়ে। আল্লাহ আপনার সব একাকিত্ব দূর করে দিক আপু। আপনার বাবা মায়ের সাথে আবার এক সাথে করে দিক এমন একটা জায়গায় যেখানে কিছু হারানোর ভয় থাকে না কারো।
Unknown said…
touching article.

Popular posts from this blog

হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো | শাহ আবদুল করিম

নজমুল আলবাবের " পাতা ঝরার আগের গল্প" - আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া বা স্মৃতির চর্বণ

ক্যাফের শহর মেলবোর্ন