চিরন্তন

চুলে ইচ্ছামতন তেল দিলাম একটু আগে।

এক সময় চুলে তেল দিতে এত বিরক্ত লাগতো! মামণি জোর করে ধরে চুলে তেল দিয়ে দিত, দেয়া শেষে তেলমাখা হাত কপালে আর গলায় ঘষে দিতো। আমি রাগে-বিরক্তিতে চিৎকার উঠতাম আর আম্মু বলতো, "আরে বুঝবি না, এত পড়াশুনা করিস, আরাম লাগবে দেখিস"। আমি প্রাণপণে ঘষে কপাল আর ঘাড়ের তেল তোলার চেষ্টা করতাম আর ভাবতাম, চুলে দিয়েছে দিক, কপাল-ঘাড়ের ব্যাপারটা কি?! বলা বাহুল্য, পরদিন চুলের শ্যাম্পুটাও আম্মুই করে দিতো।


এখন আর এই সবের বালাই নেই। সেই স্বার্থহীন ভালোবাসা, শত মুখঝামটা সহ্য করেও কেবল মঙ্গলই চেয়ে যাওয়া... সেই সব রূপকথার মত স্মৃতি হয়ে গেছে সব। এখন শুধু এতটা বয়সে আম্মুর সেই সব বিরক্তিকর আদর, ভালোবাসা আর যত্নের জন্য মাঝে মাঝে নিজেকে এত বেশি কাঙাল মনে হয়! একটাবার, কোনভাবে, যেকোনভাবে যদি তার কাছে যেতে পারতাম... যত দূর হোক, শুধু যদি সেটা হতো এই পৃথিবীর কোন একটা জায়গা, আমি গিয়ে তার বুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকতাম। মাগো, কত খারাপ ব্যবহার যে করেছি, কত মুখে মুখে তর্ক, বেয়াদবী, তোমার আদরের মূল্যটুকুই দিই নি কখনও। আর ক'টা দিন সময় দিতে মা, আরেকটু বড় হতাম, আরেকটু বুঝতে শিখতাম... আর যদি জানতাম তুমি এমনি করে চলে যাবে... বড় কষ্ট মামণি বুকের ভেতরে, বড় ফাঁকা- প্রতিটা মুহুর্তে, প্রতিটা ছোট ছোট ঘটনায়, শুধুই তোমার কথা মনে পড়ে...

আজ চুলে তেল দিয়ে কপালে আর ঘাড়েও মেখে দিয়েছি। তুমি কি দেখে একটু খুশি হলে? তোমার মেয়েটার একটুখানি আরাম হলো!

Comments

নাম লিখলাম না said…
অনেকক্ষণ ভেবেও ঠিক করতে পারলাম না কী লিখবো। ঃ(
rupan said…
নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে গেল।
তিথি আপু, নুশেরা আপুর ব্লগ থেকে আপনার এই ব্লগের সন্ধান পেলাম আজকে। আপনার পোস্ট গুলো পড়ছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। এই অধমের নতুন ব্লগ সাইটটি পদধুলির প্রত্যাশায় রইল-
www.ashraful-alam.blogspot.com
আমাদের সবার অনুভূতি হয়তো একই রকম। আমার মা এখনও আছেন, ১৯৮৩ সাল থেকে এক সাইড প্যারালাইজড। তারপরও তো আছেন। এখনও তার হাতটা ধরতে পারি ...

Popular posts from this blog

হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো | শাহ আবদুল করিম

দ্বিধা

রাহেলা