চা - নাস্তা বিষয়ক গপসপ
একটা রুটি, এক কাপ চা। এই ছিলো আমার আমার নিয়মিত সকালের নাস্তা। রুটি আমার এত প্রিয় ছিলো যে বাবা-মা আমাকে বলতো বিহারী মেয়ে। আজ অনেক দিন পরে এই মেন্যুতে সকালের নাস্তা হলো। দেশে থাকতে ভীষন স্বাস্থ্য-সচেতন ছিলাম, হালকা খেতে হবে, মোটা হওয়া যাবে না। ভাত ভালো লাগতো না মোটেই, শুধু দুপুরে অল্প একটু ভাত সাথে প্রচুর শশার সালাদ, আর সকালে এবং রাতে একটা করে রুটি, সাথে সবজি, ডিম পোচ বা অন্য কিছু। অবশ্য খানিক গুলিয়ে ফেলছি বোধ করি, কারন এই রুটিন একেবারে ছোটবেলার এবং দেশে থাকার শেষ দু'বছরের, যখন বাবা ঢাকায় বদলি হয়ে এলেন। মাঝে ইউনিভার্সিটির হলে ছিলাম যখন, তখন তো খাবারের কোন ঠিক ছিলো, যখন যা পাই তাই খাই অবস্থা। সকালে নাস্তাই হতো না, ক্লাসের ফাঁকে দুম করে গিয়ে হয়তো একটা সিঙারা খেতাম, তাও সিঙারার ভেতরের সব আলু ফেলে বাহিরের খোলস। মাঝে মাঝে একটা মজা হতো, কেউ কেউ সিঙারার আলু বেশি পছন্দ করতো বাইরের ময়দার খোলসের চাইতে, তাদের সাথে আমার এই খোলস এবং আলু বিনিময়।
-ওই তুই আলু ফালাস ক্যান, আমারে দে।
-আচ্ছা, তাইলে তুই আমারে সিঙারার কোনার দিকের শক্ত অংশটা দে।
ভালো বিনিময় প্রথা।
রানীর কথা মনে পড়ে খুব, বিশেষ করে যখন চা খেতে ইচ্ছা হয়। ভীষন চা-কফির ভক্ত আমি। স্কুলে থাকতে দিনে কমপক্ষে পাঁচবার চা খেতাম, আম্মুই করে দিতো। আহারে মেয়ে রাতদিন লেখাপড়া করে, এই আদরে। ইউনিভার্সিটিতে চা খাওয়ার ব্যাপারটা আমার জন্য সবচেয়ে সহজ হয়ে গেলো। চাইলেই ক্যান্টিন থেকে চা পাওয়া যায়, খেতে জঘন্য এই যা সমস্যা! সেটা কোন বড় ব্যাপার নয় মোটেই, পোলাপানের সাথে আড্ডা মারতে মারতে যেকোন চা-ই অনায়াসে খেয়ে ফেলা যায়। বন্ধুদের মধ্যে যারা মেয়ে তারা অধিকাংশই আমার এরকম চা-প্রীতিতে আপত্তি জানাতো, চা খেলে নাকি স্কিন সুন্দর থাকে না, কালোও হয়ে যায়! আমি এমনিতেই ফর্সা নই, আরেকটু ডার্কার হতেও আমার মোটেও আপত্তি নেই। আর এই কারনে চা খাওয়া কমাবো? কাভি নেহি! সুতরাং অবিরাম সারাদিন চলতো। সন্ধ্যায় একটু স্পেশাল চা খেতে মন চাইতো, হলের ভেতরে আমার প্রাণের দোস্ত রুমা অসম্ভব ভালো চা বানানক। সে আবার মহা পড়ুয়া, তারে সিস্টেম করে রিডিং রুম থেকে বের করে কিছুক্ষন গল্প-গান-হাঁটাহাঁটি করে তার হাতের অসাধারণ চা খেতাম। আমার চা-কফির ন্যাক সম্পর্কে রুমার বক্তব্য ছিলো, আমাকে একটা কাপ হাতে এক পুকুর চা বা কফির মধে ডুবিয়ে রাখলে নাকি আমি সবচেয়ে খুশি হতাম, মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে পুকুর থেকে চা-কফি খেতাম! আহা, তার চিন্তার ক্রিয়েটিভিটিতে আমি মুগ্ধ।
আর বাসায় ছিলো আমাদের সার্বক্ষনিক হেল্পিং হ্যান্ড রানী। এই মেয়ে আমার চেয়ে কমসে কম দশ বছরের ছোট, অথচ কি যে আদর করত আমাকে, আমিও কি ওকে কম আদর করতাম। যাই হোক, সে বড়ই মিষ্টি করে বলতো, "ছোট আপু চা খাবেন?" (তার কথার ভাষা অত্যন্ত শুদ্ধ)। আমার ঠোঁট বিস্তৃত হয়ে যেতো খুশিতে। রানী অবশ্য বিরাট ফাঁকিবাজ ছিলো, সে অনেক কাজই করতো, অধিকাংশই ফাঁকিবাজির সহিত। সুতরাং তাকে বিশেষভাবে বলে দিতে হতো, "একটু বেশি মজা করে বানাস", তাহলেই কেবল চা-টা মজা হতো, নইলে মাশাল্লাহ ক্যান্টিনের চায়ের সাথে খুব একটা পার্থক্য হতো না। আমার ওতে অভ্যাস ছিলো এই হলো সুবিধা। সুবিধা আরো আছে, যখন তখন চাইলেই এবং না চাইতেই এই যে চা চলে আসত এজন্য আমি রানীর কাছে কি যে কৃতজ্ঞ!
আহারে, এখন আর কেউ চা বানিয়ে দেয় না। দোস্ত রুমাও নাই, বাসার রানীও নাই। একটা দোস্তজামাই আছে, আমিই তারে চা বানাইয়া খাওয়াই। অবশ্য সেটাও এক রকম জোর করে। সে চা-কফির মোটেই ভক্ত নয়। অবাক হয়ে কেন জিজ্ঞাসা করলে সে বেশ গম্ভীর গলায় জবাব দেয়, "জীবন থেকে জটিলতা কমাই"! এই ডায়ালগ দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে সে বেশ বিখ্যাত হয়ে গেছে, আমার বাবাকে এরপরে যেকোন কিছু নিয়ে অভিযোগ করলেই বাবা সহাস্যে উত্তর দিতো, "জীবন থেকে জটিলতা কমাই"। সুতরাং বাসায় চা খাবার কোন সংগী নেই, আমার একার জন্য বানিয়ে খেতে আরো নিরুৎসাহ লাগে। সম্ভবত এইটা বুঝেই সে আমার সাথে টুকটাক চা খেতে শুরু করলো। ইদানিং ভালোই ভক্ত হয়েছে চায়ের, সন্ধ্যাবেলা অন্তত এক কাপ হয়ে যায়। আহারে বেচারা, বিয়ে করে জীবনের জটিলতা বেড়ে গেলো!
ফুটনোটঃ দেশে ছেড়ে আসার পরে বেশি বেশি দেশী হয়ে গিয়েছি আমি। খাদকও হয়েছি। এখন রুটি খাওয়া হয় না। খালি ভাত খাই। এবং বিরিয়ানী রাঁধতে শিখে বিরাট ঝামেলা হয়েছে, ওইটাও খাওয়া হয় নিয়মিত বিরতিতে। আগে অনেক প্রিয় হওয়া সত্তেও আইসক্রিম-চকলেট খেতাম না, এখন গপাগপ চকলেট খাই। নতুন করে যোগ হয়েছে চিজময় পিৎজা খাওয়া। আর মাঝে মাঝেই বিরিয়ানী। মাঝের থেকে আমার এত সাধের চা খাওয়া কমে গেছে, নিজের বানিয়ে খেতে হবে সেই আলস্যতে। কেমন যেন সব 69 হয়ে গেছে। অবশ্য এইবার বেশ একটা মুডে আছি। খানিক পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। বাড়ি বদলে গেলো, নতুন বাড়িটা পছন্দ হয়েছে খুব। নিজের নয় তো কি, যতদিন আছি নিজের ভাবতে সমস্যা কি? এবার থেকে আবার রুটি খাবো, চা খাবো। বিরিয়ানী খুব কম হবে। নো চকলেট (মাঝে মাঝে কেবল ফেরেরো রোশার)। আর মাঝে মাঝে একটু পিৎজা না খেলে মনের দুঃখে অসুস্থ হয়ে যাবো, ওইটাও চলবে। আর বাকি সব কন্ট্রোল। বয়স বেড়ে যাচ্ছে, নতুন করে স্বাস্থ্য-সচেতন না হয়ে উপায় কি?
-ওই তুই আলু ফালাস ক্যান, আমারে দে।
-আচ্ছা, তাইলে তুই আমারে সিঙারার কোনার দিকের শক্ত অংশটা দে।
ভালো বিনিময় প্রথা।
রানীর কথা মনে পড়ে খুব, বিশেষ করে যখন চা খেতে ইচ্ছা হয়। ভীষন চা-কফির ভক্ত আমি। স্কুলে থাকতে দিনে কমপক্ষে পাঁচবার চা খেতাম, আম্মুই করে দিতো। আহারে মেয়ে রাতদিন লেখাপড়া করে, এই আদরে। ইউনিভার্সিটিতে চা খাওয়ার ব্যাপারটা আমার জন্য সবচেয়ে সহজ হয়ে গেলো। চাইলেই ক্যান্টিন থেকে চা পাওয়া যায়, খেতে জঘন্য এই যা সমস্যা! সেটা কোন বড় ব্যাপার নয় মোটেই, পোলাপানের সাথে আড্ডা মারতে মারতে যেকোন চা-ই অনায়াসে খেয়ে ফেলা যায়। বন্ধুদের মধ্যে যারা মেয়ে তারা অধিকাংশই আমার এরকম চা-প্রীতিতে আপত্তি জানাতো, চা খেলে নাকি স্কিন সুন্দর থাকে না, কালোও হয়ে যায়! আমি এমনিতেই ফর্সা নই, আরেকটু ডার্কার হতেও আমার মোটেও আপত্তি নেই। আর এই কারনে চা খাওয়া কমাবো? কাভি নেহি! সুতরাং অবিরাম সারাদিন চলতো। সন্ধ্যায় একটু স্পেশাল চা খেতে মন চাইতো, হলের ভেতরে আমার প্রাণের দোস্ত রুমা অসম্ভব ভালো চা বানানক। সে আবার মহা পড়ুয়া, তারে সিস্টেম করে রিডিং রুম থেকে বের করে কিছুক্ষন গল্প-গান-হাঁটাহাঁটি করে তার হাতের অসাধারণ চা খেতাম। আমার চা-কফির ন্যাক সম্পর্কে রুমার বক্তব্য ছিলো, আমাকে একটা কাপ হাতে এক পুকুর চা বা কফির মধে ডুবিয়ে রাখলে নাকি আমি সবচেয়ে খুশি হতাম, মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে পুকুর থেকে চা-কফি খেতাম! আহা, তার চিন্তার ক্রিয়েটিভিটিতে আমি মুগ্ধ।
আর বাসায় ছিলো আমাদের সার্বক্ষনিক হেল্পিং হ্যান্ড রানী। এই মেয়ে আমার চেয়ে কমসে কম দশ বছরের ছোট, অথচ কি যে আদর করত আমাকে, আমিও কি ওকে কম আদর করতাম। যাই হোক, সে বড়ই মিষ্টি করে বলতো, "ছোট আপু চা খাবেন?" (তার কথার ভাষা অত্যন্ত শুদ্ধ)। আমার ঠোঁট বিস্তৃত হয়ে যেতো খুশিতে। রানী অবশ্য বিরাট ফাঁকিবাজ ছিলো, সে অনেক কাজই করতো, অধিকাংশই ফাঁকিবাজির সহিত। সুতরাং তাকে বিশেষভাবে বলে দিতে হতো, "একটু বেশি মজা করে বানাস", তাহলেই কেবল চা-টা মজা হতো, নইলে মাশাল্লাহ ক্যান্টিনের চায়ের সাথে খুব একটা পার্থক্য হতো না। আমার ওতে অভ্যাস ছিলো এই হলো সুবিধা। সুবিধা আরো আছে, যখন তখন চাইলেই এবং না চাইতেই এই যে চা চলে আসত এজন্য আমি রানীর কাছে কি যে কৃতজ্ঞ!
আহারে, এখন আর কেউ চা বানিয়ে দেয় না। দোস্ত রুমাও নাই, বাসার রানীও নাই। একটা দোস্তজামাই আছে, আমিই তারে চা বানাইয়া খাওয়াই। অবশ্য সেটাও এক রকম জোর করে। সে চা-কফির মোটেই ভক্ত নয়। অবাক হয়ে কেন জিজ্ঞাসা করলে সে বেশ গম্ভীর গলায় জবাব দেয়, "জীবন থেকে জটিলতা কমাই"! এই ডায়ালগ দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে সে বেশ বিখ্যাত হয়ে গেছে, আমার বাবাকে এরপরে যেকোন কিছু নিয়ে অভিযোগ করলেই বাবা সহাস্যে উত্তর দিতো, "জীবন থেকে জটিলতা কমাই"। সুতরাং বাসায় চা খাবার কোন সংগী নেই, আমার একার জন্য বানিয়ে খেতে আরো নিরুৎসাহ লাগে। সম্ভবত এইটা বুঝেই সে আমার সাথে টুকটাক চা খেতে শুরু করলো। ইদানিং ভালোই ভক্ত হয়েছে চায়ের, সন্ধ্যাবেলা অন্তত এক কাপ হয়ে যায়। আহারে বেচারা, বিয়ে করে জীবনের জটিলতা বেড়ে গেলো!
ফুটনোটঃ দেশে ছেড়ে আসার পরে বেশি বেশি দেশী হয়ে গিয়েছি আমি। খাদকও হয়েছি। এখন রুটি খাওয়া হয় না। খালি ভাত খাই। এবং বিরিয়ানী রাঁধতে শিখে বিরাট ঝামেলা হয়েছে, ওইটাও খাওয়া হয় নিয়মিত বিরতিতে। আগে অনেক প্রিয় হওয়া সত্তেও আইসক্রিম-চকলেট খেতাম না, এখন গপাগপ চকলেট খাই। নতুন করে যোগ হয়েছে চিজময় পিৎজা খাওয়া। আর মাঝে মাঝেই বিরিয়ানী। মাঝের থেকে আমার এত সাধের চা খাওয়া কমে গেছে, নিজের বানিয়ে খেতে হবে সেই আলস্যতে। কেমন যেন সব 69 হয়ে গেছে। অবশ্য এইবার বেশ একটা মুডে আছি। খানিক পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। বাড়ি বদলে গেলো, নতুন বাড়িটা পছন্দ হয়েছে খুব। নিজের নয় তো কি, যতদিন আছি নিজের ভাবতে সমস্যা কি? এবার থেকে আবার রুটি খাবো, চা খাবো। বিরিয়ানী খুব কম হবে। নো চকলেট (মাঝে মাঝে কেবল ফেরেরো রোশার)। আর মাঝে মাঝে একটু পিৎজা না খেলে মনের দুঃখে অসুস্থ হয়ে যাবো, ওইটাও চলবে। আর বাকি সব কন্ট্রোল। বয়স বেড়ে যাচ্ছে, নতুন করে স্বাস্থ্য-সচেতন না হয়ে উপায় কি?
Comments
চা খাওয়ার ব্যাপারটা দেখি পুরা আমাদের কাহিনী!
স্রেফ 'জটিলতা' এড়ানোর জন্যই আমি চা পছন্দ করা সত্ত্বেও, ইনস্ট্যান্ট কফির উপর দিয়ে কাজ সেরে ফেলি...
তোমার বান্ধবীও অনেক চেষ্টা করসে আমাকে এই 'জটিল' নেশা ধরানোর...আমি অবশ্য 'জটিলতা কমানোর' জন্য উল্টা ওকে 'ইনস্ট্যান্ট টি' ধরায়ে দিসি...হা হা !আমি যে কি বুদ্ধিমান!
চা তো দুধ-চা, রুটিটা কীসের, লাল আটা না ময়দা? কাঁচা-আটার না সেদ্ধ-আটার?
তিতলি ভাইয়া (ফ্রম শুঁয়োপোকা),
বলেন কী!
আমি তো সকালেও রুটি খাই, রাতেও। আমি দেখি ডাবল বিহারী।
হা হা হা।