বাদলা দিনে মনে পড়ে


দেশে নাকি খুব বৃষ্টি হচ্ছে ক'দিন ধরে। গরম থেকে আস্তে আস্তে ঠান্ডা পড়ে যাচ্ছে। এই সব খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া প্রকৃতির। তবু দূর থেকে শুনে কেমন যেন অন্য রকম মনে হয়। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। হঠাৎ যখন একটু একটু করে হালকা শীত পড়তো, সেই সময়টার কথা। হঠাৎ একদিন ফ্যান চালানো বন্ধ হয়ে যায়। বারান্দার রোদ্দুরে চেয়ার বা মাদুর পেতে বসে কিছু পড়তে খুব ভালো লাগতে শুরু করে। রাতে ঘুমানোর সময় একটু ভারী কাঁথা গায়ে জড়ানো শুরু হয়ে যায়। কেমন আদুরে, সুন্দর একটা সময়। এটাই তো হেমন্ত, না? ছোটবেলায় খুব ছবি আঁকার ঝোঁক ছিলো। একটা ছবির কথা মনে পড়ছে, গাঁয়ের মেঠো পথে একজন কৃষক মাথায় নতুন ফসলের ঝাঁকা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, তার পাশে কিছু গাঁয়ের বধু-ঘোমটা পরা, তাদের শাড়ির রঙ খুব উজ্জ্বল করে রাঙাতাম আমি, হয় সবুজ শাড়ি লাল পাড়, নয়ত লাল শাড়ি সবুজ পাড়--এই ছবির মানেই হেমন্ত।

লিখতে গিয়ে খুব অবাক হয়ে ভাবছি, তখন এই হেমন্ত'র মর্ম বোঝাটা কত কৌতুহল-উদ্দীপক ছিলো। এবং এরকম সবকিছুই। এখন যেমন খুব জেনে গিয়েছি,অনেক কিছুই। তখন সেই স্বপ্নমাখা, কৌতুহলী মনে সব কিছুই ছিলো নতুন আবিষ্কারের মতন আনন্দদায়ক। এই যে, ফসল তুলে কৃষকের ঘরে ফেরা মানেই হেমন্ত,পিঠা-উৎসব--এই জানাটাও কত উত্তেজনাকর ছিলো তখন! সবকিছুতেই অবারিত সম্ভাবনার সম্ভাবনা।

ইদানিং এরকম আবার অনেক কিছু নতুন করে জানতে ইচ্ছা করে। ঠিক তখনকার মত করে। আবিষ্কার করতে ইচ্ছা করে একেকটা শব্দের মানে, নতুন করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে"র পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলামেরও তালগাছ নিয়ে একটা ছড়া আছে যেদিন জানতে পারি, সেই নিয়ে সে কী আনন্দ আমার। ক্লাসের বন্ধুদের উৎসাহ নিয়ে বলি, তোমরা কি এই কবিতাটা পড়েছো কখনও, "ঝাকড়া চুলো তালগাছ/ তুই দাঁড়িয়ে কেন ভাই?/ আমার মত পড়া কি তোর/ মুখস্থ হয় নাই?" কেউ জানে না, কেউ পড়ে নি...আমি পড়েছি, এইটুকুতেই সে কি আনন্দ!!

আহা ছেলেবেলা! কি পরম ঐশ্বর্য জীবনের। কেমন যেন মনে হয় খুব বেশি যত্ন করে একেকটা স্মৃতিকে আলাদা আলাদা রেশমী কাপড়ে মুড়ে মণিমাণিক্যখচিত দামী সিন্দুকে ভরে মস্ত ঢাউশ একটা তালা দিয়ে জমা করে রেখেছি। চাবিটাকে রেখে দিয়েছি এত বেশি গোপন কুঠুরীতে যে মাঝে মাঝে খুঁজেই পাই না। হঠাৎ যদি তার সন্ধান পাই, চারপাশে খুব সাবধানে তাকিয়ে সন্তর্পনে পা ফেলে আমি সেই সিন্দুকের কাছে যাই। ডালা খুললেই ঝিলিক দিয়ে ওঠে সেই সব অগণিত অমূল্য সম্পদ। একেক দিন একেকটাকে দেখি আর ভাবি, নাহ ততটা গরীব বোধহয় নই সত্যি আমি।

বৃষ্টি নিয়ে একটা গান।

Comments

Ahmed Arif said…
বুক পকেটে জোনাকীপোকা।
Shahin said…
সুন্দর লিখেছেন।

Popular posts from this blog

হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো | শাহ আবদুল করিম

দ্বিধা

নজমুল আলবাবের " পাতা ঝরার আগের গল্প" - আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া বা স্মৃতির চর্বণ