কথোপকথন

সকাল সাড়ে সাতটা। এই সময়ে আমি জেগে বসে আছি এবং লিখছি এটা আমার জন্য মোটামুটি বিরাট কাহিনী।
ঘুমটা যে নেই চোখে তা নয়, কিন্তু ঘুমাতে ইচ্ছেও করছে না। থাকি জেগে কিছুক্ষন। ছুটিরই তো দিন, যদি আবার ঘুম পায় তো ঘুমানো যাবে।
আজ সাড়ে পাঁচটায়ও একবার ঘুম ভাঙলো। উঠে গিয়ে ফজরের নামাজটাও পড়ে নিলাম, বেশ একটা শান্তি শান্তি লাগছে।
কি যেন লিখতে চেয়েছিলাম ভুলে গিয়েছি.....

বাসায় একদম একলা থাকতে কেমন যেন আজব লাগে। এই যে তারু এখন কাজে চলে গেলো, আমার ছুটি, কি ভালো হত যদি এখন গল্প করা যেতো। কেমন হতো যদি ছোটআপুর সংগে বসে গল্প করা যেতো। সকালের নাস্তাটা তো তৈরিই থাকতো নিশ্চয়ই টেবিলে। প্লেট হাতে নিয়ে হয়ত টিভির সামনে বসে গুটুর-গুটুর গল্প করতাম দুই বোনে মিলে। বা দৃশ্যটাকে এখনকার সময়ের সাথে মিলিয়েও নেয়া যায়। এখন তো দুজনেই বড় হয়ে গেছি, কেউ একজন হয়ত উঠে গিয়ে দুপুরের খাবারের রান্নাটা চড়াতাম চুলায়। ভাব নিয়ে "কেউ হয়ত" বলার অবশ্য কিছু নেই, এই "কেউ"টা ছোট আপু থাকতে আমি হবার কোন সম্ভাবনা কোনকালেই ছিলো না, নতুন করে হবেও না। কিন্তু এখন হয়ত বা আমি ওকে একটু সাহায্য করতাম, আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে গল্প করেই যেতাম। অবশ্য আমাদের কথায় আমি মূলত শ্রোতা, আপুই বলে যায় বেশি, আমার ভালো লাগে শুনতে...কিন্তু এখন আসলে খুব বেশি হলে আমি যা করতে পারি তা হলো বাংলাদেশের এই মাঝরাত্তির সময়ে ওর মোবাইলে একটা কল দিতে পারি। নাহ, দরকার নেই। কত কিই তো চাইলেই হয়ে ওঠে না।

কাল আমার খুব প্রিয় একটা খাবার রেধেছিলাম, কাঁচা আম দিয়ে ডাল! আমার কিইইইই যে মজা লাগে এটা। আহারে বাবারও খুব প্রিয়। আম্মু রোজ বেশ বড় সড় একটা পাতিলে ডাল রাঁধতেন, আর আমি আর বাবা মিলে সেটা সাবাড় করে দিতাম। আশেপাশে খালা-চাচীরা অবাক হয়ে বলতেন, এত বড় পাতিলে ডাল রাধেন ক্যান? সেই ডালটা যেমন তেমন হলে হবে না, মায়ের একটা স্পেশাল স্বাদ তাতে থাকবে। কখনও শুধু ডাল, কখনও সংগে টমেটো বা গ্রীষ্মকালে কাঁচাআম। আগে বুঝতাম না কেমন করে মা করেন, আর কারো ডাল কেন এত মজা লাগে না। এখন ঠিক শিখে গিয়েছি, তিন বোনই, ঠিক আম্মুর মত করে। ভাগ্যিস! আমিও প্রায় রোজ ডাল রাঁধি এখন, তবে ছোট্ট একটা হাঁড়িতে। তারুও খুব ডাল পছন্দ করে, সেও ভাগ্যিস! কালকে ডালের সাথে কাঁচা আম দেবার পর থেকেই কেবল বারবার আম্মুকে দেখাতে ইচ্ছা করছে। কি ছাতার জীবন হয়েছে, যেই মানুষটাকে দেখালে সব কিছু সার্থক হত মনে হয়, তাকেই কোথাও খুঁজে পাই না।
আচ্ছা, বাবাকে কে বলছে যে আমি ফেব্রুয়ারিতে দেশে যাচ্ছি। এ তো ভীষন বিপদ হলো! একেবারেই জানি না যে কবে যাওয়া হবে, কিন্তু এরকম আশা করে বসে থাকলে তো সমস্যা, পরে কি কষ্টটা পাবে। সেদিন যখন আমার বোনের ছেলে শাদিব আমাকে বললো, "তিততা, তুমি নাকি ঈদের এক মাস পরে দেশে আসছো?" আমি পুরাই আকাশ থেকে পড়লাম, আরো অবাক হলাম যখন শুনলাম ও বানিয়ে কিছু বলে নি, ওকে নাকি বাবা বলেছে। আহারে বাবাটাও এমন ছেলেমানুষ হয়ে গেছে। আমি কবে বললাম যে আমি আসছি? হুম, বিষয়টা হলো, কবে যেন বলেছিলাম যে ফেব্রুয়ারীতে দেশে আসতে খুব ইচ্ছা করছে। তা ফেব্রুয়ারী নিয়ে আদিখ্যেতা তো আমি সব সময়ই করি, কিন্তু ইচ্ছা করলেই আর যেতে পারবো? কি জানি, কেমন একটা আশা হয় বোকার মত, হয়ত যেতেও পারি। কিন্তু বাবাকে ফোন করে বলে দিতে হবে যেন আশা করে বসে না থাকে।

আচ্ছা, এত হাবিজাবি কি সব বকে যাচ্ছি আমি, এখনও কি ঘুমের ঘোরে আছি? আবার কি ঘুমিয়ে পড়ব? ঘুম পাচ্ছে কিন্তু জেগে থাকতে ইচ্ছা করছে। পরোটা আর ডিম ভাজি নাস্তা করতে ইচ্ছা করছে কিন্তু ভীষন আলস্য হচ্ছে। সবকিছুতে এত বৈপরিত্য কেন?

বাইরে রোদ নেই একটুও, রোদ আজও আসবে না গত কয়েকদিনে মতই। কেমন বিষন্ন চারদিক। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ে আর প্রচন্ড ঠান্ডা আর দমকা হাওয়া। তবু একে মোটেই পাগলা হাওয়া বাদল দিন বলা যাচ্ছে না। গান শুনতেও ইচ্ছা করছে না, গল্প পড়তেও না, সিনেমা দেখতেও না।

কি যে করতে পারি এখন, জানি কি আমি?

Comments

valo likhechen kacha aam koi pailen? safeway- coles ye pawa jai naki. bhalo laglo.
toxoid_toxaemia said…
আসলেই তো! কাঁচা আম কোথায় পেলেন আপুনি ?
ডাল খেতে আমারো খুব ভাল লাগে। ডাল ছাড়া ভাত গলা দিয়েই নামতে চায়না।
পারলে ঘুরেই আসুন ফেব্রুয়ারীতে দেশ থেকে। যদিও জানি বললেই তো আর যাওয়া যায়না ! এত দূরের দেশে থাকি যে আমরা !
কাঁচা আম তো বাংলাদেী দোকানে পাওয়া যায় সব সময়। ফ্রোজেন অবশ্য, তবে একদম বাংলাদেশ থেকে আসে।
সুতরাং ইরতেজা এবং এনাম, দুইজনই পেয়ে যাবে খুঁজলে। :-)
liton hasan said…
অসাধারন, খুব ভালো লাগলো। অনেক দিন পর এমন কিছু পড়ার সুযোগ হল। আশা করি এমন অনেক লেখা আমরা পাবো আপনার কাছ থেকে।
৫/৬ বছর আগের এই লেখা এখনও কেউ কোথাও থেকে খুঁজে পড়ে, দারুণ ব্যাপার!

Popular posts from this blog

হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো | শাহ আবদুল করিম

ক্যাফের শহর মেলবোর্ন

নজমুল আলবাবের " পাতা ঝরার আগের গল্প" - আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া বা স্মৃতির চর্বণ