ক্যাফের শহর মেলবোর্ন

সোম থেকে শুক্রঃ প্রতি দিন ভোরবেলা লম্বা ট্রেন যাত্রা করে শহরতলী থেকে পৌঁছুই মেলবোর্ন শহরে।  ট্রেন থেকে নেমে কাজে যেতে মাত্র দু/ তিন মিনিটের পথ। এই দু/ তিন মিনিটে যে রাস্তাটা পার হই তার নাম Degrave Street। রাস্তার দুই পাশ জুড়ে সারি সারি ক্যাফে। অত ভোরেই পুরোপুরি ব্যস্ত সমস্ত হয়ে ওঠে ডিগ্রেভ ক্যাফে পাড়া আর ফ্রেশলি ব্রুড কফির মৌতাতে ম ম করে পুরো এলাকাটা। দু'টো পা ফেলার পরেই আমি বুকভরে শ্বাস নেই, আসলে নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নিতে চাই পৃথিবীর সমস্ত সুগন্ধির চাইতেও যে গন্ধ আমার বেশি প্রিয় তাকে। একেকটা কফিশপের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে কফির মতই তাজা তাজা ছেলেমেয়েরা, তারা মিষ্টি হেসে ভোরের শুভেচ্ছা জানায়। তাদের সাথে হালকা মাথা নুইয়ে এগুতে এগুতে দেখি আরো আরো মানুষের মুখ। এই সব মানুষদের দেখে আমার কেবলই মনে হয় এদের বুঝি কোন কাজ নেই, এরা কেমন যেন, " তোমরা যা বলো তাই বলো/ আমার যায় বেলা বয়ে যায় বেলা/ কেমন বিনা কারণে " এরকম গোত্রের মানুষ। কারো মধ্যে কোন তাড়া নেই। ওরা আরাম করে বসে গ্যাছে, গোল গোল টেবিলগুলোর ধার ধরে। প্লেট ভর্তি খাবার - The famous Aussie big brekki। আছে পোচড এগস, বা স্ক্রাম্বল্ড এগ, স্যটেড মাশরুম, পোড়া পোড়া গ্রিল্ড টমেটো, স্পিনাচ, হ্যাশ ব্রাউন, টোস্টেড ব্রেড। কেউ কেউ সাথে নিয়ে নিচ্ছে, বেকড বিন, স্ম্যাশড এভোক্যাডো ইত্যাদি। সাথে যে ক্যাপোচিনো, লাটে, ফ্ল্যাট হোয়াইট ইত্যাদি হরেক পদের কফি আছে প্রতিটা টেবিলে সে তো বলাই বাহুল্য। এর সাথে আছে ব্যস্ত পায়ে রাস্তাটি কোনমতে পার হয়ে অফিস পৌঁছানোর তাড়া খাওয়া মানুষ। তারা তাদের অভ্যাসমত টুক করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে কোন একটা কফিশপের সামনে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাউকে মুখে বলে অর্ডার দিতে হচ্ছে না,  বারিস্তা জানেন কার জন্য কি বানাতে হবে, শুধু একবার মুখ চেয়ে নিশ্চিত করে নিচ্ছেন, "মিডিয়াম লাটে, তাই তো?" 

Comments

Popular posts from this blog

হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো | শাহ আবদুল করিম

দ্বিধা

নজমুল আলবাবের " পাতা ঝরার আগের গল্প" - আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া বা স্মৃতির চর্বণ