Posts

Showing posts from 2009

মধ্যপথে ঠেকলো গাড়ি...

কুয়ালামপুরে বসে লিখছি। আমার এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আমি সত্যি সত্যি দেশে যাচ্ছি! এরকম হয়, যে ব্যাপারগুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি উতসাহ, আগ্রহ, প্রত্যাশা, অপেক্ষা বা এমন যেকোন ভালো লাগা বা কষ্টের অতি মানবীয় আবেগ জড়িয়ে থাকে, সেই ব্যাপারগুলো চোখের সামনে চলে এলে আমি ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারি না। এয়ারপোর্টে তারুকে ফেলে যখন ইমিগ্রেশান পার হচ্ছিলাম, তখন আবার এটাও বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে আমি সত্যি একা যাচ্ছি। তারুর সাথে যেকোন কিছু শেয়ার করে নিতে ভালো লাগে। নিশ্চিন্ত লাগে। আজ প্লেনে মোবাইল ফোনটা সুইচ অফ করবার পরেও কতবার যে কত কারনে ওকে কল করতে ইচ্ছা করেছে...। জানা কিছু ব্যাপার, তবু কথা বলে মিলিয়ে নিতে ভালো লাগে। মানুষ আজব ভীষণ। একই সাথে ভালো লাগা আর কষ্টের মিশেল দিয়ে কি যেন আজব এক আজব অনুভূতি হয়। এতদিন পরে দেশে যাচ্ছি সেই আনন্দ, আবার সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে ছেড়ে দশটা দিন আলাদা থাকাটাও অনেক কষ্টের। এই মানুষটার কাছে থাকবার জন্যই তো দেশ আর বাবা, আপু, বন্ধুদের ছেড়ে আসা! কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে এই প্রথম এলাম। অনেক গরম বাইরে। নেমেই একটা মজার ব্যাপার হলো, দু'টো বাংলাদেশি ছেলে, এখানেই থাকে বোধ করি, আমাকে ন

আমি গাই ঘরে ফেরার গান...

ঈদে আমার রান্নাবান্নার ফিরিস্তি শুনে বাবা খুব চিন্তায় পড়েছে, ভাবছে আমার ছোট্ট মেয়েটা কি বেশি গিন্নী গিন্নী হয়ে গেলো? এবার যখন দেশে আসবে তখন সেই আদরের মেয়েটাকে পাবো না? আমার খুব আনন্দ লাগে, আমার চোখে পানি চলে আসে...। এই সেই মানুষ, যে বয়সের হিসাব দিয়ে আমাকে পরিপক্ক হয়ে যেতে দেখতে চায় না। আমার কাছে জাগতিক লাভ-লোকসানের কোন চাহিদা নেই তো তার, আছে কেবল অসীম মমতা। ভালোবাসা-মমতায় সেইসব হিসাব কি চলে? কিন্তু বাবা, এখানে, তোমার থেকে এত দূরে, অচেনা সব আবছায়া মানুষদের ভীড়ে বড় তো আমাকে হতেই হয়, অন্তত অভিনয়, নইলে যে কেবল অভিযোগ! অনেক হলো বাবা, আবার ক'টা দিন, অন্তত সামান্য ক'টা দিন তোমার কাছে এসে আবার আগের আমি হতে চাই, যেখানে সমস্ত আবদার কেবল আমিই করব, ইচ্ছেমত যত খুশি যন্ত্রণা করব তোমাকে...। সেইসব যন্ত্রণা ঈশ্বরের উপহার ভেবে বুকে জড়াবে তুমি, জানি আমি। তাই তো বলছো আজীবন, তেমন করেই আগলে রেখেছিলে...অনেক অপেক্ষার পরও মা'র বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি নি আমি, কখনও পারবোও না। তোমার গলা জড়িয়ে আবার একটু কাঁদতে চাই বাবা, একটু হাসতে চাই... আসছি বাবা, আর মাত্র ক'টা দিন।

নেটবুক নিয়ে মহা খুশি

ইদানিং ছুটির দিনগুলো বেশ মজা করে কাটছে...ছুটির মত করেই। সকালে ইচ্ছামত অনেক ঘুমানো হচ্ছে, আবার তারপরে অনেক ঘুরাঘুরিও হচ্ছে, প্রায় চর্কিবাজি। সামনে দেশে যাবো ইনশাল্লাহ, সেই সূত্র ধরে টুকটাক শপিং-ও চলছে। আজকেও খানিকটা তাই। হালকা পাতলা কেনাকাটা করলেও করতে পারি এরকম ভাব নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কেমনে কেমনে যেন ফাটাফাটি সেল পেয়ে একটা দারুন জিনিস কিনে ফেললাম, একদম আনপ্ল্যান্ড! একটা পুচকি সাইজের নেটবুক। ল্যাপটপ বা নোটবুকের খালাতো ভাই বলা যায়। ১০ ইঞ্চি স্ক্রীন, পুরা ব্যাপারটাই কিউট লাগে আমার। খুব খুশি লাগছে। পুচকিটাকে পেটের ওপর ফেলে রাত-দুপুরে টাইপিং করতেও খুব মজা লাগছে। আজকে, আবার অনেক দিন পরে ব্লগস্পটে ঢুঁ মারলাম ওরই অনারে। থ্যাঙ্ক ইউ মাই নিউ মেট। :-)

বলিও আমার পরদেশীরে

টুক টুক করে যেতে যেতে তারপর বেশ ঘট ঘট করেই চলে যায়- সময়। এটা সেটা ভাবি, সেইসব জঞ্জাল নিয়ে লিখব বলেও ভাবি, লিখা হয় ওঠে না। কতটা সময় গিয়েছে মাঝে? উত্তর জানতে কষ্ট করে পেছনে তাকাতে হলো না, ডানে "সাম্প্রতিক লেখা" তে একটা ক্লিক করেই জানা গেলো, শেষটা ছিলো গত নভেম্বরে! খুব টান পড়েছে সূতোয়, একটু আলগা করার চেষ্টা করেই দেখি না। কিন্তু অনেক দিনের বিচ্ছিন্নতায় কেমন আড়ষ্টতা পেয়ে বসছে। এখন কি এসব লিখতে পারবো? এই রোজকার আটপৌরে জীবন নিয়ে? ও তো সবাই পার করে, রোজ। তবু লিখব আজ, কিছু একটা, ভীষন এলোমেলো করেই নাহয়। আজ আবার সচল হবো। লিখবো কেমন পাখির মত উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছি... "তোমরা রেকর্ড করে ফেলেছো, গত আট মাসে তিনটা ভিন্ন বাসায় থাকছো!"। আমি হাসি। "পরের জায়গা পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই/ আমি তো ভাই জমির মালিক নই"। এই ভিন দেশ, তার আবার বাড়িঘর, ভাবি "একখানে থাকলেই হইলো"। উহু, তাও কেমন যেন নির্লজ্জের মত মায়া পড়ে যায়, মানুষ হবার জ্বালা। এসব কি কেউ লিখে? [গাড়ি খানিক চলছে বোধ হয়, অনেক দিন পরে তেল পড়ে লাফাচ্ছে, কখন দড়াম করে হোচট খায় তাই ভাবছি!] অফিস যাবার রাস্তাটা বদলেছে। এখন বা

বরষার প্রথম দিনে...

মাথার ভেতর একগাদা গান ঘিড়িং পিড়িং করে ঘুরছে। একবার গেয়ে ফেলছি "আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে দুয়ার কাঁপে/ ক্ষনে ক্ষনে ঘরের বাঁধন যায়, যায় বুঝি আজ টুটে"। তারপরেই মনে হলো, আরে না আজ তো শ্রাবণ নয়, আষাঢ়- পহেলা আষাঢ়। এরপরে লতা মুঙেশকরের "আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন"। আছে হুমায়ূন আহমেদের "বরষার প্রথম দিনে/ ঘনকালো মেঘ দেখে/ আনন্দে যদি কাঁপে তোমার হৃদয়/ সেদিন তাহার সাথে কর পরিচয়/ কাছাকাছি থেকেও যে কভু কাছে নয়"। হুম, আজ বরষার প্রথম দিন। আজ আর তেমন কিছু নয়। কিন্তু তবু আজ আমার কাজে যেতে ইচ্ছা করছে না...ঠিক কি ইচ্ছা করছে তাও অবশ্য বুঝতে পারছি না। ভালো একটা কিছু কাজ করা যায়? রোজ তো সেই একই শুরু হয়েছে ক'দিন ধরে, রাতে ঘুমুতে যাবার আগে ইন্টারনেটে বাসা খোঁজা, কবে কোনটার ইন্সপেকশান মার্ক করে রাখা, সকালে উঠে এপ্লিকেশন রেডি কর, দৌড়াও সেইটা নিয়ে...এইসব হাবিজাবি...নট ব্যাড, নট দ্যাট ব্যাড। আজকেও তো তাই...এখন কি কাজের কাজ করব কিছু? অগোছালো রান্নাঘর গুছাবো? উহু পারবো না, ইচ্ছাই করছে না। ভ্যাকুয়াম ক্লিনারটা বের করে এলাম, কিন্তু এসে আবার হাবিজাবি লিখতে বসলাম...দেড়টা বেজে গেলো, আর তো লিখ

চা - নাস্তা বিষয়ক গপসপ

একটা রুটি, এক কাপ চা। এই ছিলো আমার আমার নিয়মিত সকালের নাস্তা। রুটি আমার এত প্রিয় ছিলো যে বাবা-মা আমাকে বলতো বিহারী মেয়ে। আজ অনেক দিন পরে এই মেন্যুতে সকালের নাস্তা হলো। দেশে থাকতে ভীষন স্বাস্থ্য-সচেতন ছিলাম, হালকা খেতে হবে, মোটা হওয়া যাবে না। ভাত ভালো লাগতো না মোটেই, শুধু দুপুরে অল্প একটু ভাত সাথে প্রচুর শশার সালাদ, আর সকালে এবং রাতে একটা করে রুটি, সাথে সবজি, ডিম পোচ বা অন্য কিছু। অবশ্য খানিক গুলিয়ে ফেলছি বোধ করি, কারন এই রুটিন একেবারে ছোটবেলার এবং দেশে থাকার শেষ দু'বছরের, যখন বাবা ঢাকায় বদলি হয়ে এলেন। মাঝে ইউনিভার্সিটির হলে ছিলাম যখন, তখন তো খাবারের কোন ঠিক ছিলো, যখন যা পাই তাই খাই অবস্থা। সকালে নাস্তাই হতো না, ক্লাসের ফাঁকে দুম করে গিয়ে হয়তো একটা সিঙারা খেতাম, তাও সিঙারার ভেতরের সব আলু ফেলে বাহিরের খোলস। মাঝে মাঝে একটা মজা হতো, কেউ কেউ সিঙারার আলু বেশি পছন্দ করতো বাইরের ময়দার খোলসের চাইতে, তাদের সাথে আমার এই খোলস এবং আলু বিনিময়। -ওই তুই আলু ফালাস ক্যান, আমারে দে। -আচ্ছা, তাইলে তুই আমারে সিঙারার কোনার দিকের শক্ত অংশটা দে। ভালো বিনিময় প্রথা। রানীর কথা মনে পড়ে খুব, বিশেষ করে যখন চা খ

পুনর্বচন

মাত্র সচলায়তনে অরূপ'দার "প্ল্যানেট আর্থ" পোস্টটা পড়লাম। সংগে থাকা ক্লিপিং-গুলো দেখলাম। প্রকৃতির কি অপার বিস্ময়! ...অরূপ'দা বলেছেন আপনার বাবা-মায়ের সাথে বসে এই ডকুমেন্টারীটা দেখার কথা। আমারও ওমনি মনে হলো, আমার বাবা-মায়ের সাথে বসে আমি এটা দেখতে পারতাম। ওরা দুজনেই খুব প্রকৃতি পছন্দ করে। বিশেষ করে আমার মা। ফুল দেখলে পাগল হয়ে যেতো। আর সারাদিন ন্যাশনাল জিউগ্রাফি চ্যানেল খুলে বসে থাকতো। একটা সময় আমাদের বাসায় স্যাটেলাইট চ্যানেল ছিলো না, "একুশে টিভি"তে সপ্তাহে একবার নাকি প্রতিদিন সন্ধ্যায় এরকম কোন একটা অনুষ্ঠান থাকতো, তাই দেখতো মুগ্ধ হয়ে। স্যাটেলাইট চ্যানেল আসার পরে মামণি কোনদিন হিন্দী সিরিয়াল দেখে নি। বাংলা অনুষ্ঠান দেখতো, নাটক-সিনেমা। আমরা মাঝে মাঝে অনুবাদ করে দিয়ে কিছু হিন্দী সিনেমা দেখিয়েছি, অপছন্দ করতো না। কিন্তু তার যত বিশেষ আগ্রহ ছিলো এই ফুল-পাখি-হরিণ-চিতাবাঘ-গহীন অরণ্য-অতল সুমদ্রের বুকে নাম না জানা অসংখ্য প্রাণীর প্রতি। আহারে, কি খুশি হতো যেন এই "প্ল্যানেট আর্থ" দেখে। এখন প্রতিটা মুহুর্ত দেখবো আর মা'র কথা মনে হবে। কি বিস্ময় আর আনন্দ ফুটে উঠতো ত

আজ শুধু নতুন

এরকম ধুরুম ধারুম করে যে কেমন একটা বছরই চলে গেলো টের পেলাম এই ৩১ ডিসেম্বরে এসে! ভাগ্যিস, এমন করেই কেটেছে। আজ নতুন বছর ২০০৯-এর প্রথম একটা দিন পার করে ভাবছি, কেমন কাটতে পারে এই বছরটা? নতুন বছরের রেজ্যুলেশন বলতে যদি এবার কিছু থেকে থাকে, তার শুরুতেই আছে...আর কি? দেশে যেতে চাই। শুধু চাই বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলা নয়, এবার সম্ভাবনার শতকরাও বেড়ে গিয়েছে অনেকটা। তাই কেবল অপেক্ষা সেটা সত্যি হবার, আর প্রার্থনা। আজ একটা মজার কথা মনে হলো, ছোটবেলার অনেক কুসংস্কারের মধ্যে এটা একটা। নতুন বছরের প্রথম দিনটা নাকি সারা বছরের একটা সারাংশ। সুতরাং এই দিনটায় সব ভালো ভালো কিছু করার চেষ্টা করতে হবে, নইলে বছরের বাকি দিনগুলোও যে তেমনই যাবে! সেই বিশ্বাসটা এখন আর নেই ছোটবেলার মত, কিন্তু একটু হলেও মনের মধ্যে উঁকি দেয়, খানিক হাসিমিশ্রিত হলেও। আজ অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না গত বছরের ১ জানুয়ারী আমি কি কি করেছিলাম! তাই দুম করেই ঠিক করলাম, আজ কি কি করেছি তা লিখে রাখব যেন বছর শেষে মেলাতে পারি। আজ দিনের শুরু যদি দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে ধরি তাহলে প্রথম যে কাজটা করেছিলাম তা হলো, অত রাতে হঠাৎ করে নুডুলস রাঁধতে শুরু করেছিলাম!