মুঠো ভরা আলো



"আমার কাছে সমগ্র দেশটাকেই পরীর দেশ বলিয়া মনে হইতো "।

উচ্চমাধ্যমিকের কোন এক শ্রেণীতে প্রথম পড়েছিলাম বিভূতিভূষন বন্দোপাধ্যায়ের লেখা "আরণ্যক"-এর একটা অংশ। সেই থেকে তাঁর জাদুময় লেখনীর ভক্ত হয়ে যাওয়া। বিভূতিভূষনের আশ্চর্য সুন্দর বর্ণনা কেমন যেন আলৌকিক একটা জগতে নিয়ে যায়। তাঁর লেখা পড়তে পড়তেই সব সময় প্রার্থনা করতাম- রূপকথার পরীর দেশ নয়, বাস্তবে যদি কখনও এমন সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়াতে পারতাম !

সব সময় ভেবেছি এই চাওয়াটুকু কেবল চাওয়াই হয়ে থাকবে হয়তো, বা তাঁর মত দৃষ্টিশক্তির অভাবে দেখেও বুঝব না। ঈশ্বরের পরম কৃপা, আমার এই দুর্ভাবনা সত্যি হয় নি। আমার দেশের খুব ছোট্ট একটা গন্ডিতে ঘোরাফেরা করা এই আমি একদিন সত্যি হাজির হলাম পরীর রাজ্যে ! ময়মনসিংহ এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির আমাবাগানে ।

বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম আরো অনেক বন্ধু মিলে। সারাদিন জার্নি আর খাওয়াদাওয়াতেই কেটে গিয়েছিল সময়, জানতামই না আমার এতদিনের কাংখিত বিস্ময় চুপচাপ বসে আছে সন্ধেবেলার আশায়! অন্য কথায় যাবো না, সেইটুকুই কেবল বলি।

.......অন্ধকার চারপাশ। রিক্সা পুরো ইউনিভার্সিটি চককর দিয়ে চারপাশের হলগুলোর মাঝের একটা রাস্তায় চলতে শুরু করলো। চলতে চলতেই অন্ধকার গাঢ়তর হলো। এত অন্ধকারে একটু কেমন যেন গা ছমছম করছিলো। আর ঠিক তখনি অন্যরকম এক আলো একটু একটু করে এগিয়ে আসতে লাগলো আমাদের দিকে। একটু পরে দেখা দৃশ্যটা আমার কাছে এখনও ঠিক বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না...শত শত জোনাকি! বেশির পরিমাপ বুঝাতে শত বলাটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, আসলে বোধহয় কোটি কোটি জোনাকি। নাহ, একটুও বাড়িয়ে বলছি না! আমরা যখন পূর্ণ অন্ধকারে ওখানটায় পৌঁছলাম, রাস্তার চারপাশের জলাশয়ে আর তার পাশের ঝোপঝাড় থেকে এমন করে জোনাকি বের হয়ে এলো যে আমার মনে হলো এ বুঝি ওদেরই জগৎ...ওরা দলবেঁধে এসে স্বাগত জানালো অতিথিদের। দৃশ্যটা এমন - আমাদের ডানে,বামে,মাথার ওপরে, চারপাশে কেবল জোনাকি আর জোনাকি! বোকার মত হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষন। তারপর ঘোর ভেংগে দুই হাত প্রসারিত করে এক ছুট লাগালাম অন্ধকার ঘোঁচানো জোনাকির আলোতে। চোখ বন্ধ করে হাত মুঠো করে আবার খুলতেই দেখি জোনাকি ভর্তি সেখানে! মুঠো ভর্তি জোনাকি চালান করে দিলাম বন্ধুর পকেটে। হাতের তেলোয় জোনাকি, পকেট ভর্তি জোনাকি, চারপাশটা জুড়ে কেবল জোনাকি আর জোনাকির রহস্যময় আলো....!

একটা সময় গা ছমছম করে আমার মনে হতে লাগলো জোনাকির আড়ালে এই বুঝি আমার সেই পরীর দেশ !
নয়?

Comments

Popular posts from this blog

হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো | শাহ আবদুল করিম

দ্বিধা

নজমুল আলবাবের " পাতা ঝরার আগের গল্প" - আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া বা স্মৃতির চর্বণ