(রূপ)টুপ(কথা)টথা

হেমিংওয়ের বুড়ো সান্টিয়াগো আর সুকুমার রায় বেশ গলাগলি-দোস্তি মুডে আছে আজকে। একটু বসে আড্ডা দেবে ভাবছে কিন্তু তেমন আরামদায়ক, নিরিবিলি জায়গা পাবে কই? একটু খুঁজে টুজে কি ভেবে তারা বসবার জন্য বেছে নিলো আমার মাথাকেই। চুল নামক বিচ্ছিরি কালো কালো আঁশগুলো সরিয়ে একটু বসতে যাবে ওমনি তাদের গাঁয়ে জেকে বসলো একগাদা খুশকি। এহ! দিলো তো গাঁয়ে এলার্জি বাঁধিয়ে...আ ছি ছি ছি বলে তাদের সেকি লাফালাফি। আমার কি আর এসব সহ্য হয়? দু'হাত দিয়ে নিজের মাথায় নিজেই দিলাম বাড়ি। আর ওমনি এই দুই ভদ্রলোক অভদ্রের মত ঢুকে পড়লো একেবারে খুলির ভেতর মগজে!

এই সেরেছে! একেবারে মগজে ঢুকে গেলো! তা এসেছেন যখন, নমস্কার নমস্কার, সালাম। আপনারা আমার অতি প্রিয় লোক, ছোটবেলায় কত না হযবরল ভাবনায় আপনারা সংগী হয়েছেন। কত না-মেটানো ইচ্ছা সান্টিয়াগোর মত কল্পনায় ভেবে সাধ মিটিয়েছি। একবার ভেবেছিলাম বড় হলে সান্টিয়াগোর সাগরেদ হয়ে এত্তবড় মাছ ধরব সাগরে। তা এতদিন পরে যখন...

"ওরে থাম থাম, অনেক বকেছিস। এবার আমাদের একটু নিজেদের মাঝে গল্প করতে দে। তার আগে বল দিকিনি, ওই যে দেখছিস হাঁস...একটু পরেই ওটা কি হবে?" সুকুমার রায়ের কথায় আমি গর্বিত হেসে বলি, "এ আর এমন কি কঠিন? ও তো হয়ে যাবে সজারু...এই না না, হবে হাঁসজারু। ঠিক হলো?" "বাহ বাহ, বেশ বেশ" সুকুমার বাবু সন্তুষ্ট হলেন। সান্টিয়াগো বললেন, "আচ্ছা, এবার আমাদের একটু গপ্পো করতে দাও মেয়ে। তুমি তোমার কাজ করো"।

হুমম। ঠিক আছে। আমি তবে আমার কাজ করি। কিন্তু এ কি? সব যে কেমন উল্টোপাল্টা লাগছে। আমার মগজ নিয়ে কি তেনারা তবে হাতিপাতি করছেন? ঠিক নয়, ঠিক নয়। মাথাটা ঝিমঝিম ঝিমঝিম রিমঝিম। আহা কি সুন্দর রিমঝিম বৃষ্টি বাইরে...টিপটিপ টিপটিপ পানির ফোঁটা, সাদা সাদা। এই তো রঙ বদলাতে শুরু করেছে, সাদা থেকে হলদে...ওমা বৃষ্টির সাথে আকাশ থেকে কি পড়ছে? এ তো খিচুড়ী! ইশ, খিদে পেয়ে গেলো... ওমনি মা-ও ডেকে উঠলো, সোনামণিমা, আগে ইলিশ ভাজাটা খাবি নাকি গরু ভুনা? আমি চেঁচাই, আম্মু, ইলিশ ইলিশ ইলিশ। মা হাসেন, খুব মিষ্টি করে, খুব খুব খু-উ-ব মিষ্টি। কিন্তু মিষ্টি আমি খাবো না, আমার ভালো লাগে না। আচ্ছা, খুব বললে একটা কেবল চমচম খেতে পারি। মিষ্টি খেতে খেতে আমি সুর করে বলতে থাকি,

"টমটম চমচম গজারির বন/
টাংগাইল শাড়ি তার গরবের ধন।
আহা গরবের ধ-অ-অ-ন।"
ধুর, কি বিচ্ছিরি এক শাড়ি পরেছি আজ, ফিনফিনে। আমার তাঁতের শাড়িটা গেলো কই? কই মাছ? আরেন্নাহ, আর খাবো না মাছ... গাছের ডালে ঝুলতে পারি বরং দোলনাতে...।"দোল দোল দোলুনি/ রাঙা মাথায় চিরুনী/ এনে দেবো হাঁট থেকে..."। ধূর এইসব হাঁট-বাজার আমাকে দিয়ে হবে না। সেখানে কত লোক গিজগিজি, হিজিবিজি হিজিবিজি তিতলী ভাইয়া, কংকা ভাইয়া জানো আজ রবিবার...আজ রবিবার, আজ রবিবার হুমায়ূন আহমেদ। এই হুমায়ূন লোকটা কি যেন একটা গান লিখেছে, "আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে..."

"খামোশ!!!!! এ গান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা।" সুকুমার বাবু বাজখাঁই গলায় ধমকে ওঠেন।
আমি আঁতকে উঠে বলি, "কোন গান?"
-এই যে তুই এইমাত্র যেটা গাইলি।
-আমি গাইলাম? গান? আমি তো গাইতেই জানি না।
এবার সান্টিয়াগো বড় বিরক্ত হলো, "আমারও মনে হয় এটা ট্যাগোর সং"।
সুকুমার ঝাড়ি দেন, "ট্যাগোর নয়, বলো ঠাকুর। তোমাদের সাদা চামড়াদের যতসব মস্করা"।
সুকুমার বাবু এবং মিস্টার সান্টিয়াগো দু'জন দু'দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলেন ৮৭ সেকেন্ড। ৮৭ সান্টিয়াগোর লাকি নাম্বার। তাই সে তক্ষুনি বললো, "এই মেয়ের মাথায় আর নয়, অন্য কোথাও চলো"।
বলেই তাদের গাঁয়ে লেগে থাকা আমার মগজগুলোকে নির্মমভাবে ঝেড়েঝুড়ে দুড়ুম করে বেরিয়ে গেলেন আমার খুলি ফুড়ে।

অনেকক্ষনের মাথাব্যাথাটা হঠাৎ হালকা হলো মনে হচ্ছে। গানটা ভালো লাগছে শুনতে, "আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে...।" আচ্ছা, এই একটা গানই বুঝি আমি সিলেক্ট করে রেখেছি সেই তখন থেকে?

Comments

প্রশংসা করছি। ভাল লেগেছে।
প্রশংসা নিলাম,ভালোলাগাটাই আসল। অনেক ধন্যবাদ।
Ahmed Arif said…
ভাল্লাগলো! এই ধরণের একটা গল্প লেখার ইচ্ছে আমার অনেকদিনের।
তাই নাকি অমিত ভাইয়া? এটা পুরা আউলা বাউলা, না? :-)

Popular posts from this blog

হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো | শাহ আবদুল করিম

দ্বিধা

নজমুল আলবাবের " পাতা ঝরার আগের গল্প" - আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া বা স্মৃতির চর্বণ